ঢাকা ২০ জুলাই, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
ডাকসুর তফসিল ২৯ জুলাই, সেপ্টেম্বরের ২য় সপ্তাহে নির্বাচন দুর্গাপুরে বসতঘর থেকে স্বামী-স্ত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার ২০২৬ সালের এসএসসি ও এইচএসসি নিয়ে বিশেষ নির্দেশনা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ৩৯ আসামি ট্রাইব্যুনালে সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা উচ্চকক্ষ নিয়ে আগামী ৩ দিনের মধ্যে একটা সিদ্ধান্ত হবে: আলী রীয়াজ ঘৃণার জবাবে ভালোবাসার বার্তা দিলেন অভিনেত্রী বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু আজ ঢাকায় বৃষ্টির আভাস, কমবে গরম ভয় জাগাচ্ছে গ্রামের ডেঙ্গু

ভয় জাগাচ্ছে গ্রামের ডেঙ্গু

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ জুলাই, ২০২৫,  11:24 AM

news image

*২০২৩ সাল থেকে রাজধানীর বাইরে বাড়তে থাকে রোগী

ডেঙ্গুকে বলা হতো শহুরে রোগ। দুই যুগের বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও রোগী ব্যবস্থাপনার বড় পরিকল্পনা ছিল রাজধানী ঘিরে। তবু রোগটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। ঠেকানো যায়নি রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এই ডেঙ্গু এখন শহরের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে গ্রামে-গঞ্জে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও মশাবাহিত রোগটি হানা দিয়েছে। জুনের পর থেকে বাড়তে শুরু করেছে শনাক্তের হার। ঢাকার চেয়ে বাইরের জেলাগুলোতেই এ বছর সংক্রমণ বেশি। এরই মধ্যে অন্তত ১০ জেলায় ডেঙ্গুর উচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। বিশেষ করে বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ এবার আশঙ্কাজনক রূপ নিয়েছে। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের চেয়ে এক বরগুনাতেই রোগীর সংখ্যা বেশি। এ বছর শনাক্ত রোগীর অন্তত প্রায় ৮০ শতাংশই ঢাকার বাইরের।

তবে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৮৭টি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু মোকাবিলায় জরিপ, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি, সক্ষমতা কিংবা জনবল নেই। জেলা ও উপজেলা সরকারি হাসপাতালের সামান্য শয্যা আর স্বল্প বাজেটের সীমিত জনবলেই চলছে ডেঙ্গুর মোকাবিলা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাতে বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, যদি গ্রামীণ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চঝুঁকির জেলাগুলোকে ঘিরে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেওয়া না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ঢাকার বাইরে বড় জনগোষ্ঠীকে আরও অন্তত তিন দশক ধরে ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। এরপর গত ২৫ বছরে আমরা ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আরও যে কত বছর লাগবে সেটাও জানা নেই। ঢাকার বাইরে পাঁচগুণ মানুষের বসবাস। অথচ ঢাকার বাইরে মশা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। অন্তত উচ্চ সংক্রমণের ১০ জেলা ঘিরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের মহাপরিকল্পনা এখনই গ্রহণ না করলে ধারণা করা হয়, ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু আগামী ৩০-৪০ বছর আমাদের ভোগান্তিতে ফেলবে। এটা খুব সহজে অনুমান করা যায়।’

পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে ডেঙ্গু রোগীর ভৌগোলিক বিস্তারে পরিবর্তন ঘটেছে। এ সময়ে ঢাকার বাইরে রোগী শনাক্তের হার পাঁচগুণ বেড়েছে। অথচ ২০২১ সালেও ডেঙ্গু ছিল মূলত রাজধানীকেন্দ্রিক। ওই বছর মোট রোগীর ৮৩ দশমিক ০৭ শতাংশই ছিল রাজধানীতে। ধীরে ধীরে পাল্টে গেছে সেই চিত্র। ২০২২ সালে ঢাকার রোগীর হার কমে দাঁড়ায় ৬২ দশমিক ৮৭ শতাংশে। অন্যদিকে, ঢাকার বাইরের রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭ দশমিক ১৩ শতাংশে। ২০২৩ সালে রাজধানীকে ছাড়িয়ে যায় বাইরের রোগী। ওই বছর ঢাকায় রোগী ছিল ৩৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ, আর ঢাকার বাইরে ছিল ৬৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০২৪ সালে ঢাকায় রোগী আবার কিছু বেড়ে ৩৯ দশমিক ৩০ শতাংশে পৌঁছায়, আর ঢাকার বাইরে রোগীর হার দাঁড়ায় ৬০ দশমিক ৭০ শতাংশ। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত দেশে মোট ১৬ হাজার ৩৯৫ জনের শরীরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৮৫৬ জন (৭৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ) রোগীই ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের বাসিন্দা। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৫৩৯ জন, যা দেশে শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চলতি বছর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৬ হাজার ৩৯৫ জনের মধ্যে রাজধানীর ৮৭ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৩ হাজার ৫৩৯ জন। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে ১২ হাজার ৮৫৬ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে এক বরগুনাতেই রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৫৭ জন, আর বরিশাল বিভাগে ৬ হাজার ৬৪৪ জন, যা দেশের সব বিভাগের চেয়ে বেশি।

ঢাকার বাইরে চার এলাকা ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে: ঢাকার বাইরে চার পৌর এলাকায় এডিস মশার উপস্থিতি বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এই চার পৌরসভা হলো ঝিনাইদহ, মাগুরা, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী। এসব এলাকাকে ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সংশ্লিষ্টরা। জরিপ করতে প্রতিটি এলাকায় ৯ ওয়ার্ডে ২১৪টি বাড়ি পরিদর্শন করা হয়। এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ‘ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)’। এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানে সেখানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়। এ ছাড়া হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। জরিপে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ পৌর এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ৬০ শতাংশ। এরপর মাগুরায় ৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, পিরোজপুরে ২০ শতাংশ ও পটুয়াখালীতে ১৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, কুষ্টিয়ায় ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তিন সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে চট্টগ্রামে ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ ও বরিশালে ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

বাসাবাড়িতে লার্ভার উপস্থিতির হিসেবে বরগুনা জেলার জরিপে পৌর এলাকায় ৩১ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৭৬ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর বাইরে মাগুরার পৌর এলাকায় ৩৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ঝিনাইদহে ৩২ দশমিক ৯৬ শতাংশ, পটুয়াখালীতে ১৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, পিরোজপুরে ১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং কুষ্টিয়ার পৌর এলাকার ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। লার্ভা পাওয়ার শতকরা হার বা হাউজ ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলে মশার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বিবেচনা করা হয়। সূত্র : দৈনিক কালবেলা 

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম