ঢাকা ২০ মে, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
সাভারে প্রকাশ্যে মাথায় গুলি করে রং মিস্ত্রিকে হত্যা সৌদি পৌঁছেছেন ৫১ হাজার ৪৩২ হজযাত্রী দাম্পত্য জীবন সুখের হয় যেসব অভ্যাসে সংগীতশিল্পী নোবেল গ্রেপ্তার সমর্থকদের উদ্দেশে যে অনুরোধ জানালেন ইশরাক ৩ জুন থেকে ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিস’ চালু করবে বিআরটিসি সাবেক এম‌পি সেজু‌তিঁ গ্রেফতার জামিন পেলেন চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া আমিরাতের কাছে হেরে লিটন দায় দিলেন শিশিরকে যৌথসভা ডেকেছে বিএনপি

ফ্যাসিজম বা ফ্যাসিবাদ কী

#

৩০ আগস্ট, ২০২৪,  6:05 AM

news image

কে. হোসাইন : ফ্যাসিজম’ বা ‘ফ্যাসিবাদ’ ধারণাটির উৎপত্তি হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইটালিতে। এরপর এই মতবাদ ছড়িয়ে পড়ে জার্মানি এবং ইউরোপের আরো নানা দেশে। জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে ‘নাৎসিজম’ বা ‘নাৎসিবাদ’ – এর উত্থান হয়। এটি ছিল ‘ফ্যাসিজম’ ইতিহাসের সর্ববৃহৎ প্রকাশ।

‘ফ্যাসিও’ শব্দটি এসছে ল্যাটিন শব্দ ‘ফ্যাসেস’ থেকে। এর অর্থ হচ্ছে, লাঠি, কাঠ বা রডের আটি একত্রে বেধে রাখা। সে আসলে ঐক্য বোঝাতে এ ধরণের প্রতীক ব্যবহার করা হয়েছিল। এর অর্থ হচ্ছে, এক বান্ডেল কাঠ ও রড যখন একসাথে বেঁধে রাখা হয় তখন সেটিকে ভাঙ্গা যায়না!

কিন্তু ইতিহাস বলে, অনায়কারী, আতচারকারী, দুর্নীতিবাজ বা যেকোন শক্তিশালী জাতি, গোত্র বা দল হোকনা কেন তারা বার বার ধুলায় মিশে গেছে এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এই পৃথিবী থেকে। ভবিষ্যতেও 'ফ্যাসিজম'  অনুসারীদের ভাগ্যে সেটাই বারবার ঘটবে।

বিগত সরকার আমলে বেশিরভাগ সরকারি ও রাজনৈতিক আরগানগুলোতে 'ফ্যাসিজম' এর ব্যত্যয় দেখা যায়নি! যেকারনে জনগণের স্বার্থ ছিল গুরুত্বহীন, চরম বিচার হীনতা এবং জুলুমবাজ ও নির্যাতন কারিরা ছিল বাংলাদেশ স্বাধীনতার নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ব্যানারে জনদরদী মুখোশধারী অবিবেচক ব্যক্তিগণ! 

যার ফলশ্রুতিতে দেশের জনগণ দেখেছেন,

একটি ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, যার ফলশ্রুতিতে শিল্প ও ব্যবসায়িক অভিজাতরা নিজস্ব সরকারী কর্মকর্তা ও নেতাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। 

এর মূল কারণ হচ্ছে, পারস্পরিক লাভজনক ব্যবসায়িক/সরকারি সম্পর্ক এবং ক্ষমতার অভিজাত শ্রেণী তৈরি করে সাধারণ জনগণ ও শ্রমশক্তির দমন করা। যেহেতু সাধারণ জনগণের সংগঠন এবং শ্রমের সাংগঠনিক শক্তিই ফ্যাসিবাদী সরকারের জন্য প্রকৃত হুমকি, তাই শ্রমিক সংগঠনগুলিকে হয় সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা হয়, অথবা কঠোরভাবে দমন করা হয়।অপরাধ এবং শাস্তির সাথে ফ্যাসিবাদী শাসনের অধীনে, পুলিশকে আইন প্রয়োগের জন্য প্রায় সীমাহীন ক্ষমতা দেওয়া হয়।  

যে কারনে, সাধারণ জনগণ - পুলিশি নির্যাতনকে পাশ কাটাতে বাধ্য হয়েপরে এবং এমনকি দেশপ্রেমের নামে নাগরিক স্বাধীনতা ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। 

ইতিহাস পাতায় দেখাযায়, ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রায়ই সীমাহীন ক্ষমতা সহ একটি জাতীয় পুলিশ বাহিনী থাকে। ফ্যাসিবাদী শাসকগুলো দুর্নীতি প্রমাণ না রাখতে সবসময় বন্ধুদের এবং সহযোগীদের দ্বারা পরিচালিত হয়। যারা একে অপরকে সরকারী পদে নিয়োগ করে এবং তাদের বন্ধুদের জবাবদিহিতা থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারী ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ব্যবহার করতে পারে। এই শাসনব্যবস্থা কায়েমের কারণে জাতীয় সম্পদ এবং কোষাগারের জন্য সরকারী নেতাদের দ্বারা বরাদ্দ করা হয়। যে ব্যাবস্থাপনায় সরাসরি চুরি, ডাকাতি করা অস্বাভাবিক নয়।

হিটলারের ন্যাশনাল সোশালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পাটিও ফ্যাসিস্ট পার্টি হিসেবে পরিচিতি ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্যাসিস্ট মতাদর্শ ধারণ করা ইউরোপের বড় রাজনৈতিক দলগুলো ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং  ইতালি এবং জার্মানিতে ফ্যাসিস্ট দলকে নিষিদ্ধ করা হয়।

মূলত ফ্যাসিজম চায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় একক আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ। যেমন হিটলার ক্ষমতা নেবার পর শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতাই নিয়ন্ত্রণ করতে চাননি, এর পাশাপাশি তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিলেন। অথচ ঐসব প্রতিষ্ঠান একসময় স্বাধীন হিসেবে বিবেচিত হতো। যেমন – ধর্মীয় উপাসনালয়, আদালত, বিশ্ববিদ্যালয়, সামাজিক ক্লাব, খেলাধুলার প্রতিষ্ঠান – মত কথা সর্বস্তরে সবকিছুতেই নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিলেন হিটলার।

ফ্যাসিজম রাজনীতির আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল জনসমাবেশ করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করা। এর মাধ্যমে তারা দেখাতে চাইতো যে জনগণ তাদের পাশে আছে। সেজন্য তারা প্রায়শই বড় আকারের জনসমাবেশ, প্যারেড আয়োজন করতো।

ফয়সিজম আদর্শের দলগুলো সবসময় জনগণ পাশ কাটিয়ে এক ব্যক্তির সর্বময় কর্তৃত্ব ও শাসনে বিশ্বাস করে। তারা মনে করে যে, রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং রাষ্ট্রের প্রধান একই ব্যক্তি থাকবেন, যার হাতে সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব থাকবে। যেমন হিটলার ও মুসোলিনি যা করতেন সেটা সবাইকে মানতে হবে।

ফ্যাসীবাদী হিটলার তরুণদের শক্তি সামর্থ্যকে প্রশংসা করে তরুণদের বোঝাতে চাইতেন যে সবকিছু দেশের জন্য হচ্ছে। তারা নানা বিষয় নিয়ে তরুণ প্রজন্মকে মাতিয়ে রাখার চেষ্টা করতেন। এবং তরুণদের সমালোচনার জবাব দিতেন শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে।

মার্কিন রাষ্ট্র বিজ্ঞানী লরেন্স ব্রিট-এর মতে 'ফ্যাসিবাদ' এর ১৪ টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। 

বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:

১) শক্তিশালী এবং অব্যাহত জাতীয়তাবাদ

২) মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা

৩) একটি ঐক্যবদ্ধ কারণ হিসাবে শত্রুদের সনাক্তকরণ

৪) সামরিক আধিপত্য

৫) আবাদ যৌনতা

৬) নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম

৭) জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আবেশ। ধর্ম এবং সরকার একে অপরের সাথে জড়িত করা

 ৯) কর্পোরেট শক্তি সুরক্ষিত

 ১০) শ্রম শক্তি চাপা দেয়া

 ১১) বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পকলার জন্য অবজ্ঞা

 ১২) অপরাধ এবং শাস্তির সাথে আবেশ

 ১৩) ব্যাপক ক্রোনিবাদ এবং দুর্নীতি

 ১৪) জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচন

ক্ষমতা স্থায়ীকরণে ফ্যাসিস্ট মূলনীতি হচ্ছে, জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচন এবং লোক দেখানো একটি অনুষ্ঠান মাত্র।  সে সুযোগ বিরোধী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রচারণা বা এমনকি গুম, হত্যা, ভোটের সংখ্যা বা রাজনৈতিক জেলার সীমানা নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনের অপব্যবহার করা এবং মিডিয়ার কারসাজির মাধ্যমে নির্বাচনকে কারসাজি করা হয়। ফ্যাসিস্ট রাজনীতি সাধারণত নির্বাচন পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণ করতে তাদের বিচার বিভাগ ব্যবহার করে। বাংলাদেশের বিগত সরকার গুলোর আমলে যার ব্যত্যয় ঘটেনি।

মূলত ‘ফ্যাসিবাদ’ আদর্শ মনেকরে যে, রাষ্ট্রই সব, এখানে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের বা স্বাধীনতার কোন স্থান নেই। এর মাধ্যমে তারা ব্যক্তি স্বাধীনতাকে হরণ করতো, ক্ষমতাকে একটি কেন্দ্রে আবদ্ধ রাখতে যা কিছু করা দরকার সেটাই করতো।

সর্ব শেষ আমাদের স্মরণে রাখতে হবে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের সাহসী অবদান এবং আমাদের এই মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জন করতে লাখো মা, বোনদের সম্ভ্রমহানি ও জীবন দিতে হয়েছে। লাখো শহীদ বাবা, ভাই-বোনদের রক্তের বিনিময়ে কেনা  এই দেশ ও স্বাধীনতা। এবং আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। 

অতএব আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, বিশেষকরে যিনি রাষ্ট্রপ্রধান আছেন এবং ভবিষ্যতে হবেন, বাংলাদেশ কোন দেশের অঙ্গরাজ্যে নয়। এটি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্র কোন একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়। এই কথাগুলো  মাথায় রেখেই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্বাচন ও নির্বাচিত ব্যক্তি নির্ধারণ করা উচিত বলে মনেকরি।  ভবিষ্যত বাংলাদেশ পরিচালনা হোক প্রকৃত দেশপ্রেমী রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা, দুর্নীতি মুক্ত থাকুক সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ এবং সৃষ্টি হোক দুর্নীতি মুক্ত সমাজ ব্যাবস্থায় একটি নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম